Monday, March 4, 2019

বিসিএসের ইতিহাস: বিসিএস কি, কেন, কিভাবে?

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভূখন্ডগত মালিকানা কোম্পানির যেসব স্থানীয় বাণিজ্যিক অফিসারদের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশীয় সংস্থাগুলোর দ্বারা পরিচালিত হতো তারা প্রধানত সুপারভাইজার নামে পরিচিত ছিলেন। কোম্পানির সিভিল সার্ভেন্টদের বলা হতো কভেন্যান্টেড সিভিল সার্ভেন্ট।
সিভিল সার্ভিসের সদস্যরা ভারতে চাকরির জন্য ভারতের সচিবের সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ হতেন বিধায় এই চাকরির নাম হয়েছিল কভেন্যান্টেড সিভিল সার্ভিস (সিসিএস)।

বিসিএসের ইতিহাস: বিসিএস কি, কেন, কিভাবে?
বিসিএসের ইতিহাস: বিসিএস কি, কেন, কিভাবে?

১৭৮৬ সালে কর্নওয়ালিস কোডের অধীনে পুনর্গঠিত সিভিল সার্ভিসকে বলা হতো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কভেন্যান্টেড সিভিল সার্ভিস। ১৮৫৩ সালের শেষ চার্টার অ্যাক্ট হওয়ার আগে পর্যন্ত কভেন্যান্টেড সিভিল সার্ভিসের দ্বার ভারতীয়দের জন্য বন্ধ ছিল। একই বছর চার্টার অ্যাক্ট হওয়ার পর সিভিল সার্ভিসে পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে রিক্রুট্মেন্টের ব্যবস্থাটি সম্পূর্ণ বিলোপ করা হয় এবং প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে লোক নিয়োগের ব্যবস্থা চালু হয়। তখন থেকেই ভারতীয়দের জন্য সিভিল সার্ভিসের দ্বার উন্মুক্ত হয়। ১৮৬১ সালে কভেন্যান্টেড সিভিল সার্ভিসের নতুন নামকরণ হয় ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস (আইসিএস)।

১৮৫৩ সালে ভারতীদের জন্য আইসিএসের দ্বার খুললেও দশ বছর অর্থাৎ ১৮৬৩ সালের আগে পর্যন্ত কোনো ভারতীয় আইসিএসের সদস্য হতে পারেনি। কারণ তখন আইসিএস পরীক্ষা যেহেতু শুধু ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হতো তাই ভারতীয় প্রার্থীদের ইংল্যান্ডে গিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হতো। অবশ্য ১৮৯৩ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট আইসিএস পরীক্ষা একই সঙ্গে ইংল্যান্ডে ও ভারতে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়। যাহোক, ইংল্যান্ডে তাদের যেতে হতো অত্যন্ত কম বয়সে এবং সেখানে দুই বছর শিক্ষানবিশ হিসেবে থাকতে হতো। সেখানে যাওয়া ও থাকা শুধু বিপুল খরচের ব্যাপারই ছিল না, সমুদ্র পাড়ি দেয়ার বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিধি-নিষেধেরও সম্মুখীন হতে হতো। তাছাড়া মুসলমানরা তখনও ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ করেনি বলে তারা আইসিএস পরীক্ষা দিতে পারত না। ১৮৬৩ সালে ভারতীয় হিসেবে সর্বপ্রথম আইসিএস অফিসার হোন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় ভাই সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯২৭ সালে অন্নদাশঙ্কর রায় আইসিএস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। ব্রিটিশ-ভারতের নিযুক্ত শেষ আইসিএস অফিসার হলেন নির্মল মুখোপাধ্যায়।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ভারতের সিভিল সার্ভিসের নাম পূর্ববর্তী ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসই (আইসিএস) বহাল থাকে আর পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সিভিল সার্ভিসের নামকরণ করা হয় সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান (সিএসপি)।

পাকিস্থানের সিভিল সার্ভিস দুই রকম ছিল। পুরো পাকিস্থানের জন্য সেন্ট্রাল সার্ভিস আর প্রদেশগুলোর জন্য আলাদা প্রাদেশিক সার্ভিস। সেন্ট্রাল সার্ভিস শব্দটি প্রথম ব্যবহার করে লী কমিশন। এটি দ্বারা শুধু সেইসব সার্ভিসকে বুঝানো হতো যেসব সার্ভিসের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার লোক নিয়োগ করত এবং কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া যেসব সার্ভিসের সদস্যদের শুধু কেন্দ্রীয় পর্যায়ের পদে নিয়োগ দেয়া হতো। সিএসপি, পিএসপি, সেন্ট্রাল ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস, টেলিগ্রাফ ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস এবং জিওলজিক্যাল সার্ভিস ইত্যাদি ছিল পুরো পাকিস্তান ভিত্তিক চাকরি।
পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত প্রদেশটির জন্য ছিল ইস্ট পাকিস্থান সিভিল সার্ভিস (ইপিসিএস)। ইস্ট পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস (ইপিসিএস) প্রথম শ্রেণী, ইস্ট পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস (ইপিসিএস) দ্বিতীয় শ্রেণী, ইস্ট পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস (জুডিসিয়াল), ইস্ট পাকিস্তান পুলিশ সার্ভিস, ইস্ট পাকিস্তান জুনিয়র পুলিশ সার্ভিস, ইস্ট পাকিস্তান সিনিয়র এডুকেশন সার্ভিস, ইস্ট পাকিস্তান জুনিয়র এডুকেশন সার্ভিস, আসাম এডুকেশনাল সার্ভিস (প্রথম শ্রেণী), আসাম জুনিয়র এডুকেশন সার্ভিস (দ্বিতীয় শ্রেণী), ইস্ট পাকিস্তান এক্সাইজ সার্ভিস, ইস্ট পাকিস্তান জুনিয়র এক্সাইজ সার্ভিস, ইস্ট পাকিস্তান এগ্রিকালচারাল ইনকাম ট্যাক্স সার্ভিস, ইস্ট পাকিস্তান জুনিয়র এগ্রিকালচারাল ইনকাম ট্যাক্স সার্ভিস, ইস্ট পাকিস্তান হেলথ সার্ভিস (আপার), ইস্ট পাকিস্তান হেলথ সার্ভিস (লোয়ার), ইস্ট পাকিস্তান সিনিয়র সার্ভিস অব ইঞ্জিনিয়ার্স, ইস্ট পাকিস্তান ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস, ইস্ট পাকিস্তান হায়ার এগ্রিকালচারাল সার্ভিস, ইস্ট পাকিস্তান এগ্রিকালচারাল সার্ভিস, ইস্ট পাকিস্তান হায়ার লাইভস্টক সার্ভিস, ইস্ট পাকিস্তান লাইভস্টক সার্ভিস, ইস্ট পাকিস্তান হায়ার ফিশারিজ সার্ভিস, ইস্ট পাকিস্তান ফিশারিজ সার্ভিস, ইস্ট পাকিস্তান সিনিয়র ফরেস্ট সার্ভিস, ইস্ট পাকিস্তান জুনিয়র ফরেস্ট সার্ভিস, ইস্ট পাকিস্তান ফুড এডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস, ইস্ট পাকিস্তান ফুড সেক্রেটারিয়েট সার্ভিস এই ২৭ শ্রেণীর চাকরি ছিল ইপিসিএসে।

১৯৭১ সালে পুরো পাকিস্থানে সিএসপি ছিল ৫০০ জন। তন্মধ্যে ২০০ জন ছিল পূর্ব পাকিস্থানী। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কেন্দ্রীয় পর্যায়ের চাকরির প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যায়। ইস্ট পাকিস্থান সিভিল সার্ভিসের (ইপিসিএস) নাম হয় বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস)। তবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধানে সিভিল সার্ভিস শব্দটা ব্যবহার করা হয়নি। সকল শ্রেণীর সিভিল সার্ভেন্টকে প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে নিয়োজিত ব্যক্তি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
Previous Post
Next Post

TheResultsBD is a largest Education Portal for PSC Results, SSC Results, HSC Results, Exam Routine, Job Circular, Admission results and all educational tools for the students in Bangladesh.

Related Posts

0 comments: